ডিজিটাল সেবার কর অব্যাহতি নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভাবনা

ডিজিটাল সেবার কর অব্যাহতি নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভাবনা
বেসিসের সাথে আমার সম্পর্কটা কিন্ত অনেকদিনের। বিভিন্নভাবে বেসিস এর অতীত ইসি বোর্ডের কাছে ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিভিন্ন দরকারী ইস্যুগুলো সুপারিশ করেছি, এক্টিভ ছিলাম বিভিন্ন স্টান্ডিং কমিটিতেও, একবার কিন্ত নির্বাচনও করেছিলাম। বরাবরই আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য বেসিস যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি অনুধাবন করেছি এবং নিজের মত ইনপুট দেয়ার চেষ্টা করেছি।

২৭ টি ডিজিটাল সেবায় কর অব্যাহতির যে বিষয়টা এখন সামনে চলে আসছে তা নিয়ে এ ইন্ডাস্ট্রির সবার মত আমিও যারপরনাই আতংকিত। আমাদের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি কিন্ত কলেবরে অত বড় নয়, অনেক কোম্পানিই কিন্ত কিছুটা বুটিক মডেলে চলে যেখানে মালিককেই প্রোডাক্ট ডেভলপ করতে হয়, মার্কেটিং করতে হয় এবং আরো কত কি!! বিগত ১ যুগে আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রির আমুল পরিবর্তনের পিছনে কিন্ত অন্যতম অবদান এই ‘কর অব্যাহতি’র বিষয়টি। কোম্পানীগুলো তাদের প্রোডাক্ট, সেবা এবং মানবসম্পদ তৈরীতে মনোযোগও দিতে পেরেছে এই কর অব্যাহতি সেবার কারনে।

এখন যদি বস্তুগতভাবেই ইয়ারলি ২৭.৫% হারে কর্পোরেট ট্যক্স দিতে হয় এই কোম্পানীগুলোকে তাহলে কিন্তু এই শিল্পের বিকাশ চরম বাধাগ্রস্ত হবে। কোম্পানিগুলো খরচ বাচাতে তখন নিজেদের প্রোডাক্ট, মানবসম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ রাখতে পারবেনা যেটার প্রভাব কিন্ত শুধুমাত্র এই ইন্ডাস্ট্রিতে হয়- দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের উপরেই প্রভাব পরবে বলে আমি মনে করি।

এই ব্যপারে আমি আমার তিনটি প্রস্তাবনা শেয়ার করছি –

১) কর অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানো হোক- অবশ্যই আইসিটি কোম্পানীগুলোর ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির সুযোগটি অন্তত ২০৩১ অব্দি বর্ধিত করা হোক, যেন কোম্পানীগুলো যথেষ্ট পরিমান সময় পায় নিজেদের গ্রোথ নিশ্চিত করতে।

২) ক্রমান্বয়ে ট্যক্স বাড়ানোর প্রস্তাবনা- ২০৩১ এর পরে যদি এই সুযোগটি আর দেয়া সম্ভবও না হয়, তাহলে তখন যেন ৫% এর উপরে কর্পোরেট ট্যক্স না হয়। কারন এই ইন্ডাস্ট্রিতে সবসময়েই নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে, নতুন দক্ষতা নিয়ে কাজ করতে হয় – যা কিনা অনেক খরচ স্বাপেক্ষ। অন্য ইন্ডাস্ট্রির সাথে এর তুলনা কখনই হবেনা। ট্যাক্স রেট একবারে না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর প্রস্তাবনা করছি ভবিষ্যতে।

৩) আইসিটি কোম্পানীগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ট্যক্স ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হয়, সেখত্রে NRB থেকে আইসিটি কোম্পানীগুলোর জন্য আলাদা হেল্প ডেস্ক থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।

ঠিক যে সময়টায় আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তখনি বাস্তবতায় চলে আসল এই কর অব্যাহতি বন্ধ হবার বিষয়টি। আমাদের এগুতে হবে অনেক দূর, সেজন্য সবার সহযোগিতা দরকার- সেটা আমাদের সরকার, নীতি নির্ধারকদের এবং সর্বোপরি আমাদের সকল ইন্ডাস্ট্রির সহযোদ্ধাদের।

আগামি বেসিস নির্বাচন কিন্ত আমার কাছে একটি আনন্দ, সবাই মিলে একসাথে দাবী আদায়ে কাজ করার, এই ইন্ডাস্ট্রির বিকাশে কাজ করার – একটি উপলক্ষ্য।